আকরাম উদ্দিন::
শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘মেধা যাচাই পরীক্ষা’ নিয়মিতভাবে চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহল। প্রথমবারের মতো বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষাটির মাধ্যমে অভিভাবক ও শিক্ষকরা বুঝতে পেরেছেন, কেন অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারেনি।
জানা গেছে, অনিয়মিত উপস্থিতি, পাঠদানে অমনোযোগিতা এবং অভিভাবকদের অবহেলা-এই তিনটি কারণেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়েছে। সচেতন মহল মনে করেন, যদি প্রতি বছর নিয়মিতভাবে এই পরীক্ষা আয়োজন করা যায়, তবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার মানও উন্নত হবে। এজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
শিক্ষার্থী সজিব মিয়া বলেন, আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাই। লেখাপড়ায় তেমন ভালো না হলেও মেধা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফল করেছি।
অভিভাবক সুজিত লাল দাস বলেন, আমার ছেলে মেধা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তবে ভালো ফল করতে পারেনি। এটা আমাদেরও ভুল। নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারিনি। এখন থেকে চেষ্টা করব, যেন সে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়।
শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার খানম বলেন, অভিভাবকদের অনুরোধ করেও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত করতে পারিনি। তবে আগামীতে মেধা যাচাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, যদি পরীক্ষাটি কোডিং পদ্ধতিতে ও ওএমআর সিটের মাধ্যমে নেওয়া হয়, তাহলে মূল্যায়ন আরও নির্ভুল ও স্বচ্ছ হবে।
শিক্ষাবিদ ধূর্জটি কুমার বসু বলেন, জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে মেধা যাচাই পরীক্ষা আয়োজন করা হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নত হবে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জে ৬৭,৭৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯,০০০ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়, যা অংশগ্রহণের দিক থেকে প্রশংসনীয় হলেও অনুপস্থিতির হার এখনো উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও তদারকির জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন যদি সজাগ দৃষ্টি রাখে, তাহলে শিক্ষার গুণগত মান নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর সৈয়দ মহিবুল ইসলাম বলেন, মেধা যাচাই পরীক্ষা অত্যন্ত সময়োপযোগী উদ্যোগ। প্রতি বছর এটি আয়োজিত হলে শিক্ষার মান ও হার দু’টিই বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকা জরুরি। এজন্য পরিবেশবান্ধব ও অনুকূল শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অতীত স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, আগে বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পেতাম, কিন্তু এখন শিক্ষকরা বন্ধুসুলভ। তবুও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। এর জন্য অভিভাবকদের অবহেলাই দায়ী। শিক্ষাবিদ প্রফেসর ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে মেধা যাচাই অত্যন্ত জরুরি। পরীক্ষা নিয়মিতভাবে চললে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও পাঠচর্চা কমে গেছে। ভালো ফলের জন্য নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকতে হবে। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইলের অপব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অভিভাবকরা মোবাইলে ব্যস্ত থাকায় সন্তানরা পড়াশোনায় গাফিলতি করছে। অভিভাবক ও শিক্ষক উভয়েরই সচেতনতা জরুরি।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, কেন অনেকে প্রত্যাশিত ফল করতে পারেনি। এর ফলে শিক্ষক ও অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী দিনে শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা যদি আরও সচেতনভাবে কাজ করেন, তবে গুণগত শিক্ষার মান উন্নত হবে। জেলা প্রশাসক আশা প্রকাশ করে বলেন, যদি সুনামগঞ্জবাসী প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে এই মেধা যাচাই পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ নেন, তাহলে জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে এবং সার্বিকভাবে শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পাবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
মেধা যাচাই পরীক্ষা অব্যাহত রাখার আহ্বান
- আপলোড সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৮:৫১:২০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৮:৫৬:২০ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকণ্ঠ